স্পোর্টস ডেস্ক: মার্কিন মুলুকের এই কোপা আমেরিকা অনেক দিক দিয়েই ‘বিশেষ’ হয়ে থাকার কথা ছিল। টুর্নামেন্টটি তার ১০০ বছর উদ্যাপন করছে, এই প্রথম দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে আয়োজিত হচ্ছে, এতগুলো দল খেলছে বলেই নয়, এবারের কোপা স্পেশাল হয়ে ওঠার কথা ছিল প্রযুক্তির ব্যবহারেও। কিন্তু সেই প্রযুক্তি কোনো কাজেই এল না ব্রাজিলের। আজ বিতর্কিত গোলের পর টানা চার মিনিট ধরে হেডফোনে কথা বলেও শেষ পর্যন্ত গোলটা বাতিল করলেন না রেফারি।
সেই গোলটাই কোপার গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে দিল ব্রাজিলকে। পেরুর কাছে ব্রাজিলের ১-০ গোলের এই বিতর্কিত পরাজয়ের পর প্রশ্ন উঠছে, কার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলছিলেন রেফারি? কী কথা বললেন? এতক্ষণ ধরে কথা যদি বললেনই, তাহলে গোলটা বাতিলও হলো না কেন?
গ্রুপ পর্বে পেরুর বিপক্ষে ম্যাচটা ব্রাজিলের জন্য ছিল এই সমীকরণে, জিতলে গ্রুপ–সেরা, হারলে বিদায়। ড্র করলেও ক্ষতি নেই। পেরুর মতো দলের বিপক্ষে ব্রাজিলের প্রথম সমীকরণের দিকেই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৭৫ মিনিট পর্যন্ত কার্যত প্রাণহীন ম্যাচটায় মনে হচ্ছিল, ব্রাজিল ড্রয়ের দিকেই এগোচ্ছে। এরপরই সেই ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া ঘটনা।
পেরুর বদলি খেলোয়াড় রুইদিয়াস আন্দি পোলোর ক্রসটা রিসিভ করার সময় ঊরু আর হাত দুটিই ব্যবহার করেছেন। সেখান থেকেই গোল। ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা রেফারিকে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরলেন ক্ষোভে-বিক্ষোভে। গোল বাতিলের দাবিতে। পেরুর খেলোয়াড়েরাও ঘিরে ধরলেন, গোল কেন বাতিল হবে এই চিৎকারে।
২২ খেলোয়াড়ের সেই জটলা, তাতে ডাগ আউট থেকে শামিল আরও বেশ কজন খেলোয়াড়ের ভিড়-চিৎকার থেকে নিজেকে কোনো মতে বের করে এনে রেফারি আন্দ্রেস কুনহা কানে বসানো হেডফোন দিয়ে কথা বললেন দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু কথাটা বলছিলেন কার সঙ্গে? আর কী কথাই–বা হচ্ছিল?
এবারের কোপায় গোললাইন–প্রযুক্তি থাকার কথা ছিল। কথা ছিল ভিডিও সহযোগিতাও পাবেন রেফারিরা। ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড যেসব নতুন নিয়ম চালু করেছে, সেগুলো কার্যকর হবে। রেফারিদের ভুল সিদ্ধান্ত কমাতে ব্যবহার করা হবে ভিডিও–প্রযুক্তি।
এবারের টুর্নামেন্টে বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে ঠিকই। যেমন ফাইনালের আগপর্যন্ত অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা হবে না। নকআউট পর্বে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফল অনিষ্পন্ন থাকলে সরাসরি টাইব্রেকার, শুধু ফাইনালে খেলা হবে এক্সট্রা টাইম। এক্সট্রা টাইমে খেলা গড়ালে অতিরিক্ত চতুর্থ বদলি খেলোয়াড় নামানো যাবে। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগমুহূর্তে জানানো হয়, বেশ কিছু প্রথাগত নিয়মের পরিবর্তন থাকলেও ভিডিও রেফারি থাকবেন না, ক্রিকেটে যেমন আছেন থার্ড আম্পায়ার।
ফলে চার মিনিট ধরে যার সঙ্গেই কথা বলে থাকুন না কেন মূল রেফারি, অন্য প্রান্তে ভিডিও রেফারি ছিলেন না নিশ্চিত। ফলে কার্যত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যত বিলম্বই তিনি করে থাকুন না কেন, যতই বারবার রিপ্লে দেখে ব্রাজিল সমর্থকদের আশায় বুক বাঁধুক না কেন, প্রথম সিদ্ধান্ত বাতিলের কোনো সুযোগ ছিল না। হলোও তা-ই। এত নাটকের পরও গোলের বাঁশিই বাজিয়ে দিলেন রেফারি।
বাকি সব খেলাই যখন এ ধরনের মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্তের বড় খেসারত রোধ করতে প্রযুক্তির দ্বারস্থ হচ্ছে, তখন ফুটবল কেন এখনো সেই সনাতন চেহারায়? আবারও উঠে গেল এই প্রশ্ন। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় দলগুলোর একটি বাঁচা-মরা নির্ধারিত হয় যে সিদ্ধান্তে, সেটি শতভাগ নির্ভুল না হোক, শতভাগ ভুল হলে মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন!-প্রথম আলো