স্পোর্টস ডেস্ক : উপমহাদেশের সবচেয়ে উত্তেজক বিষয় ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ বন্ধ। একমাত্র নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে শেখ মুজিবের দেশেই মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ। এই উপমহাদেশে। কিংবা শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু যেহেতু এশিয়া কাপ ঢাকায় তাই শনিবার ভারত–পাকিস্তান বাইশ গজের লড়াই হবে ঢাকার মিরপুরেই। অন্যত্র নয়।
মাঠের মূল বাইশ গজে পাশাপাশি চারটি পিচ। মাঝখানে ‘নো–ম্যানস ল্যান্ডের’ মতো একফালি সবুজ। যা দিয়ে দুটো, দুটো করে মোট চারটি নেট আলাদা করা! সেখানেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধে পর্যন্ত চলল দু’দলের ক্রিকেটারদের দাপাদাপি। দেখলে মনে হবে একটা দলই বোধহয় অনুশীলন করছে। পার্থক্য শুধু রঙে। অর্থাৎ জার্সির রঙে।
ভারত–পাকিস্তানকে যেন আলাদা করা দায়। কী করে করবেন? একই গায়ের রঙ। একই ভাষা। একইরকম দেখতে। বিরাট কোহলি, যুবরাজ, হরভজনরা পাঞ্জাবি ভাষায় বললে তার পাল্টা ছুটে আসে আফ্রিদি, শোয়েব মালিকদের কাছ থেকে। না বৈরিতার ভাষা নয়। বরং কুশল বিনিময়ের ভাষা। এমন ছবিই দেখতে চায় এই উপমহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু নানান কারণে যা এখন দেখা যায় না। তবে সামনের মাসে দেখা যাবে। উপলক্ষ্য, ভারতে টি-২০ বিশ্বকাপ।
আফ্রিদি দলবল নিয়ে ভারতের আগেই মাঠে পৌঁছে ছিলেন। কোহলিরা যখন মাঠে এলেন তখন জমিয়ে ফুটবল খেলছেন আফ্রিদিরা। তারিয়ে তারিয়ে কোহলি, যুবরাজ, রায়না, হরভজনরা উপভোগ করলেন উচ্ছ্বাসের মধ্যে খেলতে থাকা পাক ক্রিকেটারদের ফুটবল। আবার পরক্ষণেই ছবিটা বদলাতে সময় নিল না।
যখন কোহলি ফুটবল নিয়ে তিন–চারজনকে ড্রিবল করে এগিয়ে যাচ্ছেন তখন উমর আকমল, মোহাম্মদ আমির নিজেদের অনুশীলন থামিয়ে হাঁ করে দেখে গেলেন! হানাহানির বদলে এই ছবিই তো দেখতে চায় উপমহাদেশ। তৃতীয় বিশ্বের দুটি দেশের কাছে এর চেয়ে বড় বিনোদন বলিউডি ছবিও হতে পারে না। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের কাছেও।
এই ছবি দেখতে না পেয়েই খুব রাগ। তা গতকাল কথা বলেই বোঝা গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ভারতের ঝুলিয়ে দেওয়াটা ভাল করে মেনে নিতে পারেননি ওরা কেউই। তা সাংবাদিক মহল হোকই বা ক্রিকেট মহল। গত ডিসেম্বরে ভারতের প্রস্তাবিত পাক সফরে নরেন্দ্র মোদি সরকার সবুজ সঙ্কেত না দেওয়ায় ‘শরহাদ কে ওসপারে’ ব্যাপক রাগ। ব্যাপক অভিমান।
আবার ঠিক উল্টো ঘটনা হল, টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার জন্য নওয়াজ শরিফ সরকার কিন্তু আফ্রিদিদের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। এই সুযোগ কি কেউ ছাড়েন? ছাড়লেন না পাক অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদিও। শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বসে পাকিস্তান অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি খানিকটা ঘুরিয়ে ভারত সরকারের সমালোচনা করলেন।
আফ্রিদি বলেন, দেখুন দু’দেশের রাজনীতির মধ্যে কখনই খেলাধুলোকে মিশিয়ে ফেলা উচিত নয়। আমরা বলে থাকি দু’দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা সবসময়ই খেলার ব্যাপারে উষ্ণতা প্রকাশ করে থাকেন। যে কোনও বৈরিতা খেলার মাধ্যমেই প্রশমিত হয়। জানি, আমরা ভারতে খেলতে গেলে ভারতীয় দর্শকরা খুশি হয় আবার আমাদের দেশে ভারত খেলতে গেলে আমাদের দেশের মানুষ খুশি হন। ভাল কথা আমাদের সরকার ভারতে খেলতে যাবার অনুমতি দিয়েছে। আসলে এটা আগেও দেখা গেছে আমাদের সরকার সবসময় আগে উদ্যোগ নেয়।’
ঢাকা তৈরি ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথ দেখার জন্য। গত ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে শেষ দেখা হয়েছিল দু’দলের। ২০১৫ সালে, ৩৭৭ দিন পর ফের মুখোমুখি। এই ‘যুদ্ধে’র উন্মাদনা ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। শনিবারের সব টিকিট শেষ। ঢাকা তৈরি সিটবেল্ট বেঁধে। উড়ান নেওয়ার জন্য।