ঢাকা: যুগ-যুগ ধরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্যরকম উত্তেজনা, রোমাঞ্চ, আর বারুদে উত্তাপে ঠাঁসা। প্রতিটি মুহূর্ত যেন শ্বাসরুদ্ধকর। দুই দেশের বৈরি রাজনৈতিক সম্পর্কটাও যেন উঠে আসে ২২ গজের কমব্যাট জোনে। বাংলাদেশে চলমান এশিয়া কাপে তেমনি একটি ম্যাচেরই প্রতীক্ষায় ভক্ত-সমর্থকরা। শনিবার চলতি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মিরপুরে মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। ক্রিকেট ম্যাচ না বলে মহারণ বললেও অত্যুক্তি হব না।
লড়াইটা পাকিস্তানের পেস বোলিং বনাম ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং। ইমরান-ওয়াসিম-ওয়াকার-শোয়েবদের স্বর্ণালী যুগে শচীন-সৌরভ-দ্রাবিড়-লক্ষণরা পরীক্ষা দিয়ে গেছেন। তাদের পরবর্তী যুগেও সেটির অবসান হয়নি। সম্প্রতি রোহিত-কোহলি-রায়না-ধোনিরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন মোহাম্মাদ আমির-ইরফান-ওয়াহাব রিয়াজদের। আবারও পাক-ভারত লড়াইয়ের সেই রোমাঞ্চকর উপখ্যান দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। এশিয়া কাপে ভারত নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে চিরশত্রু পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও বিটিভি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলে কথা। আবার ম্যাচটা হচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে। তাইতো শনিবার সন্ধ্যায় এ ম্যাচটার দিকে দৃষ্টি থাকবে কোটি-কোটি দর্শকের। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক না কেন টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে এটাই স্বাভাবিক। শনিবারের ম্যাচ নিয়েও টিকিটের জন্য হাহাকার। বাংলাদেশের সমর্থকরাও তো এদিন দুইভাগে ভাগ হয়ে যাবেন এই ম্যাচ দেখতে। সবার চোখ শুধু থাকবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই দেখার।
মিরপুরে খেলা অথচ এই দুই দল শুক্রবার অনুশীলন করেছে ফতুল্লায়। ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে নিজেদের মিরপুরের উইকেটে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন। স্বাগতিকদের বিপক্ষে জয়ের পর তারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। সেই হিসেবে পাকিস্তান বাংলাদেশে এসেছে বুধবার। অনুশীলন করেছে মাত্র একদিন। অবশ্য বাংলাদেশের মাটিতে বরাবরই ভালো করার রেকর্ড আছে পাকিস্তানের।
তাছাড়া শহীদ আফ্রিদি বাহিনী পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) টানা ক্রিকেট খেলেছে। তারা এখন টি২০ ধারাতেই রয়েছে। দু’দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল টি২০ বিশ্বকাপে এই মিরপুর স্টেডিয়ামেই। আবার দুই বছর পর সেই মিরপুরেই দু’দল মুখোমুখি। সাপে-নেইলে সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেটই মাঝে মধ্যে বয়ে আনে সৌহার্দের বার্তা।
শুক্রবার দলের অনুশীলনের আগে পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি বলেন, ‘খেলাধুলা সব সময় দু’দলের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে। দু’দেশের সমর্থকেরা এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবে। খেলাধুলার মধ্যে আমরা রাজনীতির রং লাগাতে চাই না।’
শহীদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিকের মতো পাকিস্তান দলে যেমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছে, তেমনি মোহাম্মদ নেওয়াজের মতো তরুন ক্রিকেটারও রয়েছেন। শহীদ আফ্রিদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তবে ভারতের বিপক্ষে তাদের পরিসংখ্যান খুবই খারাপ। ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয়বার মুখোমুখিতে মাত্র একবারই (৪-১) জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
অপরদিকে বড় আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সব সময়ই ভয়ংকর এক দল ভারত। বড় আসরে তারা যেন হারতেই জানেনা পাকিস্তানের বিপক্ষে। সে হিসেবে এশিয়া কাপে দু’দলের ফলাফল সমানই। দু’দলই পাঁচটি করে ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দেয়ার পরও দারুণ জয় তুলে নিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। মিরপুরের সবুজ উইকেটেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন রোহিত শর্মা।
সেই সঙ্গে ভারতের বোলাররাও রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। তবে ঐতিহ্যগত লড়াইটা থাকছে এবারও। আসল লড়াই হবে পাকিস্তানের পেসার ও ভারতের ব্যাটিং। শুক্রবার দলের অনুশীলনের আগে এ প্রসঙ্গে ভারতের ওপেনার রোহিত শর্মা বলেন, ‘পাকিস্তানের ভালোমানের কিছু বাঁ-হাতি পেসার রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা আমাদের ব্যাটিং নিয়ে আরো পরিকল্পনা করছি। প্রত্যেক দলের আলাদা কিছু শক্তির জায়গা থাকবে। তবে আমরা চেষ্টা করবো আমাদের শক্তির জায়গাগুলোতে ফোকাস রাখতে।’
যদিও এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি কেউই ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারেননি। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তারা জ্বলে ওঠার চেষ্টায় থাকবেন। অন্যদিকে মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজদের নিয়ে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ খুবই শক্তিশালী। ব্যাটিং লাইনে কিছুটা দুর্বল মনে হলেও শোয়েব মালিক-মোহাম্মদ হাফিজরা জ্বলে উঠলে ভালো কিছুই হতে পারে বলে মনে করছে পাক ভক্তরা।
এবার দেখার বিষয়, ম্যাচ শেষে কার মুখে শেষ হাসি। ধোনি না আফ্রিদি?