২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিসিবি কর্তৃক সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার কথা এ বছরের ১৩ আগস্ট। সুতরাং আর মাত্র দিন পনের পরেই। গোটা জাতি যখন আশরাফুলের ফেরার আনন্দে বিভোর, তখনই বেরিয়ে এল এক নির্মম সত্য। আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা কেবলই আংশিকভাবে। ফলে এখনই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এ খেলা হচ্ছে না আশরাফুলের।
দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বিসিবির অধীনে আয়োজিত সকল ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইসিসির অন্যান্য সদস্য দেশের বোর্ডের অধীনে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট অপেক্ষা নিম্ন মানসম্পন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন আশরাফুল। কিন্তু বিপিএল বা জাতীয় দলের হয়ে খেলার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা, তা আপাতত বহালই থাকবে। কেবলমাত্র ২০১৮ সালের ১৩ আগস্টের পরই নিষেধাজ্ঞা থেকে পূর্ণাঙ্গ মুক্তি মিলবে আশরাফুলের। তখন জাতীয় দল, বিপিএল বা বিদেশী প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট – কোথাওই আর খেলতে বাধা থাকবে না আশরাফুলের।
জানিয়ে রাখা ভাল, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট প্রাথমিকভাবে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আশরাফুল। পরে সেই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে পাঁচ বছরে আনা হয়। সাথে আরও একটা শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। বিসিবি ও আইসিসির অধীনে আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী কর্মশালা ও ট্রেনিং প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশ নিলে আরও দুই বছরের সাজা মওকুফ হবে আশরাফুলের।
এই রায় মেনে নিতে পারেনি বিসিবি ও আইসিসি। তারা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ক্রীড়া আদালতে আপিল করার। কিন্তু পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। বরং পর্দার অন্তরালে থেকে তারা আশরাফুলের সাথে একটি বিশেষ রফা করে — ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা কাটলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরলেও, বিপিএল ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হবে না তার। সূত্রমতে আশরাফুলও এই বিশেষ ব্যবস্থায় সম্মতিই দিয়েছিল। তাই এই মুহূর্তে শুধু বিসিএল, এনসিএল, ডিপিএলের মত টুর্নামেন্টে খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাকে।
আইসিসির এক মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশরাফুলের বিপিএল ও জাতীয় দলের হয়ে খেলার ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, “২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বিসিবির অধীনে আয়োজিত সকল ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইসিসির অন্যান্য সদস্য দেশের বোর্ডের অধীনে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট অপেক্ষা নিম্ন মানসম্পন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন আশরাফুল।”
তবে সব বিতর্কের অবসান ঘটান ব্রিটিশ আইনজীবী ইয়াসিন প্যাটেল, যিনি ছিলেন ফিক্সিং কেলেংকারি নিয়ে আদালতে ওঠা মামলায় আশরাফুলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি পরিষ্কারভাবে জানান, “আশরাফুল ১৩ আগস্ট , ২০১৬ থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে পারবেন। কিন্তু তিনি বিপিএল বা জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবেন না।”
সুতরাং অপেক্ষা শেষ হয়েও আসলে হল না। বরং নতুন করে দিন গোনা শুরু করতে হবে আশরাফুল ভক্তদের। ১৩ আগস্ট, ২০১৮ এর পরই আইনের সকল শিকল ছিন্ন করে পুরোপুরি মুক্ত হবেন তিনি। এবং তারপরই তিনি বিবেচিত হবেন জাতীয় দলের সম্ভাব্য খেলোয়াড় হিসেবে, এবং বিপিএলে কোন দলের হয়ে মাঠ মাতানোর।