পুরস্কারের পুরো টাকাটাই মাকে দেব: এদের



স্পোর্টস ডেস্ক : পুরো নাম এদেরজেও আন্তোনিও মাসেদো দে লোপেজ। সংক্ষেপে এদের। বয়স ২৮। রবিবার রাতে স্তাদ দে ফ্রান্সে তার যেন পুনর্জন্ম হল! দুরন্ত গোলে পর্তুগালকে উপহার দিলেন ইউরো কাপ। ক্রিশ্টিয়ানো রোনালদোর মতো মহাতারকা, আতোঁয়া গ্রিজম্যান, পেপে-র মতো নক্ষত্রদের পাশে রবিবার নতুন তারকার জন্ম হল ইউরো কাপের ফাইনালে।

অথচ, ফাইনালের ৪৩ মিনিট বাদ দিলে, টুর্নামেন্টে তাকে দেখা গিয়েছে মাত্র ১৩ মিনিট! সেটাও হয়তো খেলা হতো না। কারণ কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস জানিয়েছেন, এদেরকে দলে নেওয়া হয়েছে শেষ মুহূর্তে। পর্তুগালের নতুন নায়ক অবশ্য কৃতজ্ঞ অধিনায়ক রোনালদোর কাছে।

এদের বলেছেন, ফাইনালের আগের দিন রোনালদো বলেছিলেন, আমাকে খেলতে হবে। আমি গোলও পাব। অধিনায়কের উৎসাহে আমি অভিভূত।

পর্তুগালে সংবাদমাধ্যম ম্যাচের পর জাতীয় দলের নতুন নায়ককে জিজ্ঞাসা করেছিল, গোলটা কি তিনি রোনালদোকে উৎসর্গ করবেন? জবাবে

এদের বলেছেন এক মহিলার নাম! তিনি সুসানা তুহিস। তার মেন্টর।

এ বিষয়ে এদের বলেন, খেলা ছেড়ে দেওয়ার অবস্থা হয়েছিল। সেখান থেকে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন মনোবিদ সুসানা। প্র্যাক্টিসে একটা শট মারার আগেও ভয় করত! শটটা গোলের দিকে যাবে তো?’’ এমনই মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে এক বন্ধুর মাধ্যমে এদেরের সঙ্গে আলাপ সুসানার। পেশায় মহিলা ছিলেন ব্যাঙ্ক কর্মচারী। কিন্তু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এদেরের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর সুসানাও নতুন কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করলেন।

রবিবার ইউরো কাপ জয়ের পর তার প্রতিক্রিয়াও জেনেছে পর্তুগালের সংবাদমাধ্যম। সুসানা বলেছেন, আজ আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন। চেষ্টা করতাম ওর মধ্যে থেকে বড় ফুটবলার হওয়ার জেদটা বার করে আনতে। ওকে বলতাম ভাবতে যে, চোট পাওয়ার আগের মরসুমেই ব্রাগার হয়ে ১৮ ম্যাচে এদের ১৩টা গোল করেছিল। তার মধ্যে একটা গোল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো দলের বিরুদ্ধে।

শৈশব থেকেই এদেরের জীবনে শুরু হয়েছিল লড়াই। গায়ানা-বিসাউয়ে জন্ম হলেও তিন বছর বয়সে তাকে পর্তুগালের কুইমব্রার একটি অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। কারণ, ছেলের খরচ বহন করার সামর্থ্য ছিল না। সেই আশ্রমেও এদেরকে নিয়ে প্রায়ই অশান্তি হতো। কারণ, পড়াশুনো না করে খুদে এদের শুধু পড়ে থাকতেন ফুটবল নিয়ে।

১৮ বছর বয়সে প্রথম পেশাদার ফুটবলার হিসাবে পর্তুগালের দ্বিতীয় ডিভিশনে তুরিজেন এফসি-তে এদের সই করেছিলেন। তার বেতন তখন মাত্র ৪০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা)।

রবিবার রাতের পর পেশাদার ক্লাবগুলোর কাছে এদেরের কী দাম হতে পারে সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইউসেবিও-র দেশের নায়ক বলছেন, পুরস্কার মূল্যের পুরোটাই মাকে দিয়ে দেব। তাতে যদি ছোটবেলায় আমাকে আর্থিক দুর্গতির জন্য অনাথ আশ্রমে পাঠানোর যন্ত্রণাটা একটু কমে!

সমগ্র বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক

এক্সক্লুসিভ